চন্দ্রাভিযান, শূন্যতা এবং মনোপলি
আজ থেকে ৪৮ বছরেরও বেশি সময় আগে সর্বশেষ পৃথিবীর মানুষ চাঁদের বুকে তার পদচিহ্ন রাখে। সেই ২১শে জুলাই, ১৯৬৯ সালে নীল আর্মস্ট্রং থেকে শুরু। ডিসেম্বর, ১৯৭২ সালে হ্যারিসন স্মিত সর্বশেষ মানুষ… ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২… এই অল্প কিছু সময়ে মোট ১২ জন চাঁদের মাটিতে হাটাহাটি করেছে। ছয়টা Apollo মিশন। Apollo- ১১ হতে ১৭… মাঝে ১৩ তম মিশন ফেইল…তখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কোথায় ছিল, আর এখন কোথায় আছে, কল্পনা করুন। আজকে আপনার আমার পকেটের স্মার্টফোনের কম্পিউটেশন্যাল ক্ষমতা Apollo 11 রকেটের অন বোর্ড সিস্টেমের চেয়ে বহুগুন শক্তিশালি। তো এই যে ৪৮ টা বছর কেটে গেল, জাপান, ইউরোপ, রাশিয়া, চীন, কারোই মুরদ হল না চাঁদের মাটিতে পা রাখার। অথচ এই ৪৮ বছরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভুতপূর্ব উন্নতি হয়ে গেল। আজকে চাঁদের মাটিতে ফাইভ স্টার হোটেল, হানিমুন, এসব হবার কথা ছিল। তো কেনো আর চন্দ্রাভিজান হল না? এর উত্তর নানান ব্যক্তির কাছে নানান ভাবে পাওয়া যায়। এক পক্ষ বলে, লুনার মিশনের জন্য যে বাজেট লাগে, সেটা অনেক বেশি। আর যেহেতু সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে আমেরিকার চন্দ্র বিজয় হয়ে গেছে, সেহেতু আর এসবের দরকার নেই। বাদ দাও। আরেক পক্ষ বলে, প্রথমদিকে আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন, উভয় দেশই কল্পনা করেছিলো চাঁদের উপর ঘাটি বসাবে। মিলিটারি ঘাটি। তো পরবর্তীতে সোভিয়েত ইউনিয়ন দূর্বল হতে থাকায়, এক পর্যায়ে এসবের প্রয়োজনীয়তাও কমে যায়। সোভিয়েতরা সেইসময় চাঁদের ভ্যান হ্যালেন রেডিয়েশন বেল্টের কথা বলতো, যেটার জন্য চাঁদের উপর পা রাখা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। অথচ সোভিয়েতরা আশির দশকেও Verena mission চালিয়েছে। সৌরজগতে সূর্যের দ্বিতীয় নিকটতম গ্রহ ভেনাসে মানুষবিহীন spacecraft পাঠিয়েছে তিনটি। সোভিয়েত স্পেস অভিযান গত শতাব্দীর আশির দশকের মধ্যভাগ পর্যন্তও পুরোদমে চলেছে। এমনকি আফগানিস্তানের ফাইটার পাইলট আব্দুল আহাদ মোহমেন্দ Soyuz TM-6 রকেটে করে সোভিয়েত’দের সাথে ১৯৮৮ সালে স্পেসে ঘুরে এসেছে। ১৯৮৮ সালের প্রযুক্তিও আজকের ২০২১ সালের তুলনায় একরকম কিছুই না । পৃথিবী আজ কোথায় চলে এসেছে। যাই হোক, তো আরেক পক্ষ আছে, যারা গত ৪৮ বছরে আর একটিবারের জন্যেও কোনো দেশ বা কোনো সংস্থার তরফ থেকে চন্দ্রাভিযান না হবার কারণে এই চন্দ্রাভিযানের সত্যতা নিয়েই প্রকাশ্যে প্রশ্ন তোলে। নিজেরা নিজেদের মত করে যুক্তি দেখায়। যাই হোক। আমার আজকের লিখার মুখ্য উদ্দেশ্যে চন্দ্রাভিযান নয়। এটা শ্রেফ ভুমিকা হিসেবে দিলাম। আজকের লিখার মূল বিষয় দুইটি শব্দ… “ভ্যাকুয়াম” তথা শূন্যতা… আরেকটা হল “মনোপলি” … কম্পিটিশন না থাকাটা। When you stand on the enemy’s chest and rejoice in the moment of killing the enemy, that is your best moment. ultimate triumph. Because you have no more enemies. There is no more enemy to defeat. No competition. Then your enemy is yourself. আমেরিকার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ছিল আমেরিকানদের কাছে না হলেও মার্কিন সরকারের কাছে গত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহুর্ত। প্রথম বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয়েও অংশীদারিত্ব ছিল। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে চলা স্নায়ু যুদ্ধের পর যে বিজয়, এবং সারা দুনিয়াতে মনোপলি তৈরি করা, আইডিওলজিক্যালি প্রতিপক্ষ শেষ করে দেবার যে আনন্দ, সেটা নিরংকুশ বিজয়। আর নতুন কোনো প্রতিপক্ষ নেই। নেই নতুন কোনো আইডিওলজি। একটা সময় ছিল, যখন বিশ্বকে বদলে দিতে চেয়েছিলো নানান ধ্যানধারণা, আইডিওলজি। কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ, প্রশ্নটা তা নয়। এই যে চর্চাটা ছিল, এই চর্চাটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমেরিকানদের কাছে কেনো ক্যাপিটালিজিম ভালো সোশ্যালিজম বা কমিউনিজমের থেকে, ডেমোক্রেসি কেনো ভালো অথরেটেরিয়ান বা ডিক্টেটোরিয়াল সিস্টেমের চেয়ে, আবার একজন চাইনিজ কমিউনিস্টের কাছে কেনো পুঁজিবাদ খারাপ, কেনো ধনতন্ত্র অভিশাপ, তার কাছে কমিউনিজম বা সোশ্যালিস্ট ইকোনমি কেনো বেটার অপশন, আবার একজন জার্মানের কাছে ন্যাশন্যালিস্ট সোশ্যালিজম কেনো রাশিয়ান কমিউনিজমের থেকে বেটার, এই যে চিন্তার যুদ্ধ, এই যে ধ্যানধারণা নিয়ে আলাপ আলোচনা, এসব ছিল। মানুষের চিন্তা খোরাক ছিল। এই যে আইডিওলজিক্যাল চর্চা, সেই চর্চা হোক ভুলে ভরা, বা হোক ত্রুটিপূর্ণ, কিন্তু ছিল তো… থাকাটাই তো গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিপক্ষ ভালো না হলে ফাইট করবেন কার সাথে? বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম যখন অস্ট্রেলিয়াকে হারায়, তখন আপনার বেশি ভালো লাগে? নাকি যখন জিম্বাবুয়েকে হারায় তখন? একটা সময় ছিল, যখন শচীন টেন্ডুলকারের টেস্টে সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ২৪৮ … বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। ২০০৪ সালে শচীন বাংলাদেশে এসে এই স্কোর করেছিলো। তখন পর্যন্ত ওটাই ছিল টেস্টে শচীনের সর্বোচ্চ স্কোর। তো ঐ ম্যাচের ব্রেকে ভারতীয় সাবেক খেলোয়াড় কির্তি আজাদ ম্যাচ বিরতির সময় এক আলোচনায় কিছুটা মক করেই বলেছিলো, শচীনের মত মহান খেলোয়াড়ের সর্বোচ্চ স্কোর হবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, এটা চিন্তা করলে কেমন জানি লাগে। শচীনের সর্বোচ্চ স্কোর হবে অস্ট্রেলিয়া বা অন্যকোনো দলের বিপক্ষে ! তখন এই কথা শুনে আমার খারাপ লেগেছিলো। কারণ আমি বাংলাদেশের। কথাগুলো আমার গায়ে লাগছে। কিন্তু আমি যদি ভারতীয় হতাম, আমিও হয়ত কির্তি আজাদের মতই চিন্তা করতাম। যেমন এখন আমি আশা করি সাকিব আল হাসান অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাঁচ উইকেট নেবে। সেঞ্চুরি করবে… ব্লাহ ব্লাহ ব্লাহ। একজন ব্যাটসম্যানের জন্য ব্রেট লি’র বলে ছয় মারা, আর খালেদ মাহমুদের বলে ছয় মারার ভেতর আলাদা ফিলিংস থাকে বৈকি… গত ত্রিশ বছরে মার্কিন রাজনীতিও বদলে গেছে। গতকাল সিএনএনে একজন পলিটিক্যাল কমেন্টেটর এসে আফসোস করে বলছিলেন, আমরা আবার আগের সময়ে ফিরে যেতে চাই, যখন দুই দল নিজেদের ইকোনমিক পলিসি কেমন হবে, আইডিওলজি কেমন হবে, গভর্মেন্টের রোল কেমন হবে, ফরেন পলিসি কেমন হবে, এসব নিয়ে তর্ক বিতর্ক করবে। এখনকার “they are stealing our jobs”… “we are invaded by alien immigrants”.. “we are losing our country”…. “they are stealing our jobs”…. . “we will make our country great again”… এসব চটকদারি স্লোগান অথবা আনরিয়েলিস্টিক ভাবনা অথবা শ্রেফ রেসিয়াল ইস্যুকে ক্যাশ করে চলমান এই রাজনীতি আমেরিকাকে পেছনে নিয়ে যাবে।এখন এমন বহু মানুষই ডেমোক্রেট বা রিপাবলিকান পার্টি করে, তাদের অনেকেই এই দুই দলের আইডিওলজি, ইতিহাস, এসব তেমন কিছুই জানে না। বহু ট্রাম্প সাপোর্টারকে প্রশ্ন করা হয়েছে, ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে মূল আইডিওলজিক্যাল পার্থক্য কি, সেটার ব্যাপার… ভালো কোনো ব্যাখ্যাই দিতে পারেনি তারা। যেমন দেশে, তেমন নেতা — বলে একটা কথা আছে। একসময় আমেরিকার মানুষ চাঁদে যাবার স্বপ্ন দেখেছে জন এফ কেনেডির ভাষন শুনে। একসময় আমেরিকার মানুষ তাদের আইডিওলজিক্যাল এনিমি সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে স্নায়ু যুদ্ধ করেছে। কিছুদিন আগে একজন ম্যাথ টিচার ভিডিও ব্লগেও হঠাৎই বলছিল, “ছোটবেলা আমি যখন বুক ডাউন দিতাম, তখন বাবা পাশে বসে কাউন্ট করতো। আমি যখন হাল ছেড়ে দিতাম, তখন বাবা বলতো, তুমি আরো দুইটা বুক ডাউন বেশি দাও। কারণ তোমার বয়সী কোনো সোভিয়েত ছেলে হয়ত ওদের দেশে তোমার চেয়ে বেশি দেবে” ব্যাপারগুলো পুরোপুরিই সাইকোলজিক্যাল। একসময় আমেরিকার বড়বড় শহরে বাংকার বানানো হতো সোভিয়েতদের নিউক্লিয়ার বোমার হাত থেকে জনতাকে বাঁচাতে। বিল গেইটস পর্যন্ত Ted Talk এর একটা স্পিসে এসে ঘটনা প্রসঙ্গে বলতেছিলো, ছোটবেলা তার বাসাতেও অন্য সবার মত ব্যারেল ভর্তি শুকনো খাবার রাখা থাকতো যাতে ছয় মাস খেয়ে বেঁচে থাকা যায় সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে নিউক্লিয়ার যুদ্ধের সময়। তো এই যে ভয়, এই যে প্রতিযোগিতা, নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে নিজেকে বেটার বা বেস্ট হিসেবে তৈরি করার বাসনা, এই জিনিসগুলো সাইকোলজিক্যালি অনেক ইমপ্যাক্ট তৈরি করে। আউট অফ দা বক্স মানুষ কাজ করে। আজকে ইসরাইল যেমন করে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে। they have to be the best, otherwise what will happen, everybody knows. ক্যাপিটালিজমের সবচেয়ে ভাল দিক হল প্রতিযোগিতা। আবার প্রতিযোগিরা কখনো প্রতিযোগিতা পছন্দ করে না। আপনি ভালো স্কুলে এলে দেখবেন, ছেলেপেলে ৯০-৯৫ পেয়ে ফাস্ট হচ্ছে। তাকে বিট দিতে হলে আপনাকে ৯৬ পেতে হবে। তাদের থেকে বেটার হতে হবে। আর স্কুলের সব যদি ডামিশ পোলাপান হয়, আপনি ৫০ পেয়েও ফাস্ট হবেন। তখন আর ৯৬ পাবার জন্য আপনি দিনরাত খাটাখাটি করবেন না। সমস্যা হল, দিনরাত খাটাখাটি করতে কারোরই ভালো লাগে না। আপনিও চাইবেন, আরামছে ক্লাসের ফাস্ট বয় হয়ে থাকতে। মনেমনে দোয়া করবেন, সব প্রতিযোগি যাতে ডামিশ হয়ে যায়। মনে আছে, থ্রি ইডিয়েট মুভির সেই চাতুরের কথা? রাতের বেলা ক্লাসের ছেলেপেলেদের হোস্টেলের রুমের দরজার নিচ দিয়ে প্লে বয় ম্যাগাজিন আর পর্ণ ভিডিওর সিডি দিয়ে আসতো। যাতে রাতে লিখাপড়ায় তাদের সমস্যা হয়।মানুষ এখন যত বেশি আইডিলজি ড্রিভেন, তার চেয়েও বেশি ভোগবাদিতাই বিভোর। এখন কে কত কামাবে, এসব নিয়ে প্রতিটি মানুষের অত্রকেন্দ্রিক চিন্তা। বড় স্বপ্ন নেই। সমষ্টিগত চিন্তা, দেশের চিন্তা, বা জাতিগত চিন্তা, কোনোকিছুকে জয় করার স্বপ্ন, কোনো কিছুকে জয় করার নেশা, এসব খুব দ্রুত হারিয়ে যেতে থাকবে। আপনি নিজের ক্ষেত্রেই চিন্তা করে দ্যাখেন। আপনার স্বপ্ন কি? গাড়ি, বাড়ি, বিদেশি পাসপোর্ট? এসব? সমুহ সম্ভাবনা আছে, আপনার স্বপ্নের কোথাও আপনার দেশ, আপনার জাতি, এসব নেই। স্বপ্নের পুরোটাই জুড়েই আপনি। গত দুইদিন আমেরিকার যে পরিস্থিত টিভি পর্দায় দেখলাম, এটা আমেরিকার জন্য একটা এলার্মিং কল। সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সকে আমার খুব ভালো লাগে। এই লোকের ফোরস্যাইট ভালো। গভীরভাবে ভাবতে পারে, এবং কনসিক্যুয়েন্স ভবিষ্যতে কেমন হতে পারে, সেটা প্রেডিক্ট করতে পারে। বার্নি স্যান্ডার্সের কথা শুনলাম গতকাল। জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবে, তাতে সন্দেহ নাই। কিন্তু শান্তির দিন আসবে না। সামনে বহুকিছু হবে। রিপাবলিকান দলটির মজ্জা বদলে দিয়েছে ট্রাম্প। রোন্যাল্ড রিগ্যান বা লিংকনের পার্টি এটি আর নেই। ট্রাম্প একটা কাল্ট তৈরি করেছে। আবার খোদ বিল মাহেরের মত লিবারেলরাও নিজ দল ডেমোক্রেটদের রাজনীতি নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। ডেমোক্রেটদের রাজনীতিও ভালো পথে নেই। অতিমাত্রায় পলিটিক্যালি কারেক্টনেস, বা রেথোরিক্যাল রাজনীতি, মুখে এক, কাজে আরেক, হিপোক্রেসি, এসব…। মার্কিন লিবারেল মিডিয়াও পচতে বসেছে। মধ্যপ্রাচ্য আর চাইনিজ অর্থ এসব মিডিয়াতে ভালোভাবেই ঢোকে। মার্কিন মিডিয়াতে রাশিয়াকে এখনো আমেরিকার নাম্বার ওয়ান প্রতিপক্ষ হিসেবে জাহির করা হয়। গত চার বছর ট্রাম্পের Russia Probe নিয়েই মিডিয়া গরম ছিল। অথচ আমেরিকার মূল প্রতিপক্ষ এখন আর রাশিয়া নয়। তেমন বেশি জায়গায় আমেরিকার সাথে রাশিয়ার কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্টও হবার সুযোগ নেই। রাশিয়া তো ঠিক আমেরিকার মতই একটা পুঁজিবাদী দেশ। আগে রাশিয়ানরা সারাদুনিয়াতে কমিউনিজম আইডিওলজি একপোর্ট করতো। এখন তো তেমন না। রাশিয়া তো দেশে দেশে গিয়ে বলবে না, বলতে পারবে না যে আমেরিকা বাদ দিয়ে আমার সাথে আসো। সেই কথা বলার মত কোনো আর্গুমেন্ট বা ক্ষমতাও নাই। মার্কিনীরা যখন মিডিয়াতে রাশিয়াকে নাম্বার ওয়ান শত্রু হিসেবে জাহির করে, সেইসময় চীন খোদ আমেরিকার সাথেই ব্যবসা বানিজ্য করে ফুলে ফেপে উঠেছে। এখন আমেরিকার গ্লোবাল সম্রাজ্যে ভাগ বসানো শুরু করেছে চীন। চীন এখন সর্বত্র। ভবিষ্যতে দেখবেন হয়ত বাংলাদেশে ইংলিশ মিডিয়ামের মত চাইনিজ মিডিয়াম স্কুল খোলা হবে। হাহাহাহাহা… হতে পারে। চীনে চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্ট ক্ষমতায়। কিন্তু গোটা চীনে সবই আছে, কেবল সেই কমিউনিজম আর নেই। ক্যাপিটালিজমের চূড়ান্ত স্পর্শ পাবেন চীনের মেগা সিটিগুলোতে। চীন এখন আর কোনো দেশে কমিউনিস্ট পার্টিকে ক্ষমতায় আনার জন্য নির্ঘুম রজনী ব্যয় করেনা। চীনের ধান্দা ঠিক আমেরিকার মতই। ব্যবসা। মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকা যেমন ডিক্টেটর বা রাজাবাদশাহ’দের সাথে ব্যবসা করে যাচ্ছে, গনতন্ত্রের পক্ষে একটা কথাও না বলে সিসি বা সালমানের মত লোকেদের সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে, আবার অন্যত্র যেখানে সম্পর্ক ভালো না, সেখানে একনায়কতন্ত্র থাকলে সাদ্দামের মত উচ্ছেদ করে গনতন্ত্র ফিরিয়ে আনার ডাক দিচ্ছে। মানুষ এসব হিপোক্রেসি ধরতে পারে। তখন আর কোনো মোরাল গ্রাউন্ড থাকে না। চীন যেমন আফ্রিকা বা ভেনিজুয়েলার এক নায়কতন্ত্রের সাথে আছে, আবার পাকিস্তানের সাথেও থাকে। চীনের হিসাব আমেরিকার মতই। গ্লোবাল ব্যবসা কায়েম করা। এই যা। আমেরিকার সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ এই চীনই। তাতে সন্দেহ নাই। এবং আমেরিকার বর্তমান ইন্টারন্যাল কনফ্লিক্ট, ভলনারেবল সিচ্যুয়েশনকে ভবিষ্যতে ক্যাশ করবে চীন। ঘরে শান্তি না থাকলে প্রতিপক্ষ সামাল দেয়া মুশকিল। আর আমেরিকাতে রুজভেল্ট বা কেনেডি মত প্রেসিডেন্ট নিকট ভবিষ্যতে আসবে বলেও কেনো জানি আর মনে হয় না। (হোক ডেমোক্রেট, হোক রিপাবলিকান) কে ভালো, কে খারাপ, সেই আলোচনা ভিন্ন ব্যাপার। প্রতিটি মানুষই সময় এবং সমাজের সন্তান। সময় ও সমাজই মানুষ তৈরি করে দেয়। সময়টা খারাপ। এই যা।
Written By: Faisal Shovon