রেস্টুরেন্টের সামনে অনেক গুলো গাড়ির মাঝে রিয়া দের কালো Toyota Rav-4 গাড়িটা দেখতে পেয়ে মুনিমের বুঝতে বাকি রইলো না প্রতিবারের মতো এবারো সে দেড়ি করে ফেলেছে আসতে। রিয়ার বার বার ফোন কেটে দেয়া থেকেই মুনিম বুঝেছিলো রিয়া এসে বসে আছে। আশেপাশে কোনো ফুলের দোকান দেখতে পাচ্ছে না মুনিম। কি আশ্চর্য গত বছর যখন এসেছিলো তখনো তো ছিলো মনে হয়। ঢাকা যাওয়ার আগে যখন এই শহরেই থাকতো তখন প্রায় রিয়ার জন্য ওই দোকানটা থেকে ফুল নিতো ও। এখন সেখানে একটা ফ্লেক্সিলোড এর দোকান শোভা পাচ্ছে। যেখানে গোলাপের ঝুড়িটা থাকতো সেখানে একটা ফটোকপির মেশিন৷ দেয়ালভর্তি টেলিকমের রঙ বেরঙ এর পোস্টার গুলো মুনিমকে লাল সাদা হলুদ ফুল গুলোর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে বার বার৷ রিয়া ফুল যে খুব একটা পছন্দ করে এমন না। আগে রিয়ার সাথে দেখা করতে যাওয়ার সময় মুনিম ফুল নিয়ে যেত কারন ফুল মুনিমের বড্ড ভালো লাগে। যতোবার মুনিম ফুল নিয়ে যেতো রিয়া ফুলটা হাতে নিয়েই বলতো শুধু শুধু টাকা নষ্ট করে এই জিনিষ কেনা, এটা আমি বাসায় নিয়ে যাবো কেমনে? বলেই ফুলের সৌরভ আছে কিনা শুকে দেখত৷ সৌরভ পেলে মুখে একটা হাসি খেলে যেতো ওর। ফুলটা হাতের মধ্যে রেখে দিত আর গল্পের ফাকে ফাকে ফুলটা নাকের কাছে নিয়ে ঠিক একি হাসিটা হাসতো যেই হাসিটা প্রথমবার হেসেছিলো। আর সৌরভ না পেলে ফুলটা চলে যেতো ব্যাগে। যেদিন এমনটা ঘটবে সেদিন বুঝতে হবে আজকে রিয়ার মন মেজাজ ভালো না৷ মুনিমের ধারনা সৌরভটা আসলে যতোটা না ফুলে থাকে তার থেকে বেশি থাকে রিয়ার মনে। আজকে একটা গোলাপের বড্ড দরকার। আবারো ভালো করে আসে পাশে দেখে নিলো মুনিম। নাহ কোথাও নেই। . রিয়া ফ্রাইড রাইস খেতে খেতে কথা বলছে আর মুনিম মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখছে রিয়াকে। আজকে মুনিম ঠিক করেছিলো যেভাবেই হোওক বিলটা ওই দেবে কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারো রিয়াই দিয়ে দিলো আর সেই চিরচেনা স্বরে হাসতে হাসতে বললো বিলের ওই টাকাটা দিয়ে একটা নতুন শার্ট কিনিয়ো এইটা দেখি অফিসেও পড়ে যাও আমার সাথে দেখা করতেও এইটা ভিডিও কল দিলেও এইটা। এটাকি তুমি কিনসিলা নাকি এটাও আমিই কিনি দিসিলাম? মুনিম উত্তরে হেসেছিলো শুধু। – তুমি হা করে তাকাই আসো কেন? রিয়ার ভ্রুকুটিতে সম্বিত ফিরে পেলো মুনিম। একটু হাসার চেষ্টা করে বললো – না তোমার কথা শুনতেসি। – হুম তাইলে কি বুঝলা? প্রেম করলেই যে বিয়ে করতে হবে এমন কোনো কথা নাই। আমরাতো আমাদের বেস্ট ট্রাই করসি তাই না? -ঠিক ঠিক। আর বিয়ে করলে দুনিয়ার ঝামেলা। প্রেম আর বিয়েতো এক জিনিষ না। দেখা যাবে কেও কারো কথা শুনতেসি না উলটা ঝগড়া হয়ে বিচ্ছিরি অবস্থা। দুই ফ্যামিলিও happy না আমরাও happy না। অন্তত ভালোবাসাটা থাক ওইটা নষ্ট না হোক। – তুমি এতো ম্যাচিওর হইলা কখন? তুমি তো আগে বলতা বিয়ে না হইলে মরে যাবা মেরে ফেলবা তুলে নিয়ে আসবা! – আরে ওইগুলাতো মজা করতাম বাইচ্চা ছিলাম gf ধরে রাখতে কতো কি বলা লাগে। – গুড এখন একটু নিজের ভালো বুঝা শিখ। কাওকে ভালো না বেসে নিজেকে ভালোবাসো। love yourself most. Like me. – sorry এইটা তো করতে পারব না। আমার একটা থিউরি আসে শুনবা? – শুরু হইসে আবার। শুনব না তোমার থিউরি ফিউরি তোমার কাছে রাখ। – আরে শোন মজা পাবা যদি একটু বোঝার চেষ্টা করো। মুনিম দুই হাত টেবিলের ওপর রেখে ভরিক্কি চালে বলতে শুরু করল – ভালোবাসা একটা মানবিক গুন। এর জন্য দুইটা সত্তার দরকার হয়। একজন অন্য একজনকে ভালোবাসবে৷ যেমন মা তার সন্তানকে ভালোবাসে। সন্তান তার মা কে ভালোবাসে। দুইটা সত্তা আছে এখানে ৷ যখন কেও বলে যে আমি নিজেকে ভালোবাসি তার মানে তার মধ্যে সে দুইটা সত্তা তৈরী করে ফেলসে। সে multiple personality disorder এ ভুগতেসে৷ আবার ভালোবাসা একসাইড থেকে হয়তে পারে৷ যেমন আমি তোমাকে ভালোবাসি এটা আমার ব্যাপার কিন্তু তোমার যে আমাকে ভালোবাসতেই হবে এটা আমার উপর নাই! এখন তুমি তোমাকে ভালোবাসো এটা তুমি জানো কিন্তু এই “তোমাকে” “তুমিকে” ভালোবাসে কিনা এইটা কিন্তু তুমি জানো না। রিয়া খাওয়া থামিয়ে সরু চোখে মুনিমের দিকে তাকিয়ে থাকল। মুনিমের হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে সে চিন্তা করল হাই হাই শেষ পর্যন্ত ডেটিং এ এসে হার্ট এটাকে কে মরবে নাকি। অনলাইন নিউস পোর্টালের থাম্বনেইলে লিখা থাকবে “প্রেমিকার সরু চোখের চাহনীতে প্রেমিকের মৃত্যু দেখুন ভিডিও সহ”। আচ্ছা এই রেস্টুরেন্টে সিসিটিভি আছে তো নাকি? . রেস্টুরেন্টের সামনেই ব্যাস্ত রাস্তা। ঘন ঘন রিক্সা সিএনজি ছুটে যাচ্ছে এক রাশ ধূলো উড়িয়ে। রিয়া ওর নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো – তাহলে আসি। মুনিম আশেপাশে তাকিয়ে বললো – গাড়ি কই? – গাড়ি পাঠাই দিসি রিক্সা করে যাব। মুনিম হাতের ইশারাতে একটা রিক্সা থামিয়ে ভাবল ও নামিয়ে দিয়ে আসবে কিনা রিয়াকে এটা জিজ্ঞেস করবে। কিন্তু তা না করে বললো -আচ্ছা তাহলে যাও। আল্লাহ হাফেজ। রিয়া রিক্সাই উঠে অন্য দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলল -আল্লাহ হাফেজ। রিয়াকে নিয়ে রিক্সাটার চলে যাওয়া দেখছে মুনিম৷ কিছু দিন আগেও যখন রিয়া রিক্সা করে চলে যেত মুনিম এভাবেই দাড়িয়ে রিক্সার দিকে তাকিয়ে থাকত। রিয়া রিক্সার পিছনের পর্দাটা তুলে পিছন ফিরে মুনিমকে দেখে হাসি মুখে হাত নেড়ে বিদায় জানাতো। মুনিম অপেক্ষা করছে কখন রিক্সার পর্দাটা সরবে। হঠাৎ মুনিম আবাক হয়ে দেখলো ফুলের দোকানটার জায়গাতে ফুলের দোকানটা ঠিকি আছে! ফ্লেক্সিলোডের দোকানটা গায়েব! ঝুড়িতে এক গাদা লাল গোলাপ। রিয়াকে নিয়ে রিক্সাটা অনেক দূর চলে গেছে। মুনিমের খুব ইচ্ছা করছে একটা গোলাপ কিনে দৌড় দেয় রিক্সাটার পিছে পিছে। . মুনিমের এক হাতে চা আর এক হাতে গোলাপ। গোলাপে কোনো গন্ধই নেয়৷ ফুল হিসেবে গোলাপ কি ওভার রেটেড? মুনিম বোঝার চেষ্টা করছে গোলাপ ফুল ওর এতো পছন্দ কেনো? গল্প সিনেমাতে নায়ক নায়িকার ভালোবাসা প্রকাশের সিম্বল হিসেবে ব্যাবহার হয় এজন্য কি? হতে পারে এটাই অবচেতন মনে শেকড় গেড়ে বসে আছে হয়ত। গোলাপ মানেই ভালোবাসা ভালো লাগা। চায়ে চুমুক দিয়ে শান্তি পাচ্ছে না মুনিম। চা হতে হবে এমন যেনো চুমুক দিয়েয় শরীর আর মন চাংগা হয়ে যাবে। বাসায় যেতেও ইচ্ছা হচ্ছে না। ইদানিং বাইরে থাকলেই ভালো লাগে বেশি৷ কতক্ষন হবে এখানে বসে আছে ও? ১-২ ঘন্টা? বাসায় যাওয়া যাক এবার। উঠে চায়ের দাম দিয়ে বাসের জন্য দাড়ালো। মুনিম খেয়াল করে দেখেছে যখন ও যেই বাসের জন্য অপেক্ষা করে সেই বাস ছাড়া আর সব বাস রাস্তায় একটু পর পর যায়৷ আজকেও ব্যাতিক্রম হলো না। মুনিমের তাড়া নেই দাঁড়িয়ে আছে আর গুনছে কতোগুলো বাস যাচ্ছে। আজকে দেখা যাক যে বাসের অপেক্ষায় সে আছে সেই বাস কতোতমো বাস হয়৷ হঠাৎ মুনিম এই মুনিম ডাকে বাম দিকে ফিরে দেখে ওর থেকে কিছুটা দূরে একটা কালো গাড়ি দাড় করানো। যে মানুষটা ওকে ডাকছে সে রিয়ার বাবা। মুনিম এগিয়ে গিয়ে সালাম দিলো। রিয়ার বাবা সালামের জবাব না দিয়ে ব্যাস্ত হয়ে বললেন রিয়ার সাথে তোমার কি হয়েছে বলতো মেয়েটা বাসায় যাওয়ার পর থেকেই কাদছে কিছুতেই কান্না থামে না৷ আমি আর তোমার আন্টি তোমাদের বাসার দিকে যাচ্ছিলাম ভাবছিলাম তোমাদের বাসাটা চিনবো কি করে দেখি তুমি দাঁড়িয়ে আছো। ভালোই হলো গাড়িতে উঠো ইয়াং ম্যান। মুনিম কি মনে করে হাতের ফুলটা নাকের কাছে নিলো৷ এক মন মাতানো সৌরভে ওর রক্ত কণিকা গুলো যেনো ভরে গেলো সাথে সাথে।
Sometimes this old heart feels young,With a thousand words waiting to burst out of itThey…
দেশের বিখ্যাত এক শিল্পগ্রুপের মালিক তিনি । জীবনে বহু অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ পোড় খাওয়া লোক ।…
আজ থেকে ৪৮ বছরেরও বেশি সময় আগে সর্বশেষ পৃথিবীর মানুষ চাঁদের বুকে তার পদচিহ্ন রাখে।…
In the event that a patient comes into a facility, guileless to the extraordinary advantages…
Science, to be at its best, should be a social cycle. The joint effort between…
কারও ব্যক্তিগত পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে আলাপ-আলোচনা আমার খুবই অপছন্দের। আর, কোন নারীর পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে আলোচনা আরও…
This website uses cookies.