বর্ণবাদ এবং বিয়ের বাজার
পাত্র হিসাবে আপনার লম্বা ছেলে পছন্দ । পাত্রী হিসাবে আমারও সুদর্শনা কাউকেই পছন্দ হবে । প্রথমটার নাম দিয়েছেন “‘চয়েস “‘ । পরেরটার নাম দিয়েছেন রেসিজম ।
টাকমাথা ছেলে দেখলে আপনার মুখ গোমড়া হয়ে যায় । আপনি চান মাথা ভর্তি চুল । শুধু আমি লম্বা চুলের কাউকে চাইলেই অপরাধী হয়ে যাই । পছন্দ শুধু আপনারই থাকবে । অন্যদের নয় ।
বিয়ে করতে গেলে আপনি বিসিএস ক্যাডার বা সরকারী চাকুরেকে প্রাধান্য দেন । এইটা হইলো আপনার রুচি । আর আমি যদি চাই আমার স্ত্রী চাকুরী করবে না । ঘরেই থাকবে তাহলে সেইটা হইলো আমার গোঁড়ামি ।
হ্যাংলা ছেলে আপনার পছন্দ না । আপনি ঋত্বিক মার্কা ফিট বডি খোঁজেন । এইটাকে বলে স্মার্ট চয়েস । অথচ আমি স্লিম ফিগারের কাউকে খুঁজলে “”দেখসো …পোলাটা মনে করে মেয়েরা একটা পন্য । মানুষ কি মোটা হয় না ? “”
আমেরিকান রেসিজমের নাম করে নিজের ডার্ক কালারটাকে উপজীব্য করে “” ফর্সা মেয়ে খোঁজ ক্যান “” টাইপ খোঁচা মারতে ছাড়েন না । অথচ হাজব্যান্ড যদি মাসে শপিং করার টাকাটা না দেয় , বিউটি পার্লারে না যেতে দেয় তাহলে বাড়ি মাথায় তুলতে দ্বিধা করেন না । অনেক সময় তো সন্দেহ করে বলেও বসেন “‘ নতুন কাউকে পাইলো নাকি ? “”
নিজের ভাইয়ের বিয়ে দেয়ার জন্য আপনি সব সময় নিট এন্ড ক্লিন একটা মেয়ে খোঁজেন । মেয়ের রিলেশন থাকতে পারবে না । ধার্মিক হইতে হবে ব্লা ব্লা ব্লা
আর আপনাকে বিয়ে করতে আসা কেউ যদি প্রশ্ন করে রিলেশন ছিল কিনা , লিটনের ফ্ল্যাট গেছো কিনা , ধর্ম কর্ম করো কিনা তাহলে ওই ছেলে হইলো ছ্যাঁচড়া বদের হাড্ডি ।
আপনি যদি কারণ দেখিয়ে কোন রিলেশন ব্রেকাপ করেন তাহলে আপনি হইলেন প্রজ্ঞা সম্পন্ন মহিলা ।আর আপনার প্রেমিক যদি এই কাজ করে তাহলে সে হইলো চিটার ,বাটপার । এই সকল উপাধি আপনাকে দেয়াই যাবে না । আপনি এগুলোর উর্ধে ।
আপনি যদি কারো ক্যারিয়ার দেখে বিয়ে করেন তাহলে আপনি হইলেন একজন সচেতন মানুষ । আর আমি যদি মেয়ের বাবার টাকা পয়সা দেখে বিয়ে করি তাহলে আমি হইলাম লোভী এবং কাপুরুষ ।
আপনার ভাইয়ের বিয়েতে শ্বশুড় বাড়ি থেকে প্রচুর জিনিস দিলে সেইটা হইলো উপহার সামগ্রী । সেগুলো নিতে আপনার আপত্তি নাই । বরং কম দিলে আপনার ভাইয়ের বউ হয়ে আসা মেয়েটার চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করতে ছাড়েন না । আর আপনার বিয়েতে একই কাজ হইলে সেটার নাম হইলো যৌতুক । আর ওরা হইলো অমানুষ ।
আপনার বর যদি রান্নার কাজে আপনাকে সাহায্য করে তাহলে সে হইলো বন্ধু সুলভ । আর আপনার ভাই যদি নিজের স্ত্রীকে সাহায্য করে তাহলে আপনার ভাইয়ের বউ হইলো একটা পাষণ্ড মহিলা ।
দয়া করে কারো চয়েসের গন্ডি নির্ধারন করে দেবেন না । ফর্সা মেয়ে বিয়ে করলেই কেউ রেসিজমের ধারক বাহক হয়ে যায় না । মেয়ের বাপের টাকা পয়সা দেখে বিয়ে করলেই কেউ লোভী হয়ে যায় না । ভালো ক্যারিয়ারের একটা ছেলেকে বিয়ে করলেই আপনাকে যেমন অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত হবে না , ঠিক একই ভাবে সুদর্শনা কাউকে বিয়ে করলেই কেউ খারাপ হয়ে যায় না । ভালোবাসা আর সৌন্দর্য্যের জায়গাটা অনেক বড় । সেখানে একটা বন্ধ্যা মেয়ের সাথেও কোন ছেলে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারে । আবার পঙ্গু অক্ষম একটা ছেলের সাথেও কোন মেয়ে আজীবন থেকে যেতে পারে ।
সমস্যাটা ডার্ক কালারে নয়
সমস্যাটা বাপের প্রচুর টাকাপয়সাতেও নয় ।
সমস্যা নয় ক্যারিয়ারেও ।
সমস্যা হলো আপনার হীনমন্যতায় । যে হীনমন্যতা আপনাকে শিখিয়েছে ফর্সা হওয়ার ক্রিম ইউজ করলে দশটা ছেলে আপনার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকবে । যে হীনমন্যতা আপনাকে শিখিয়েছে সুন্দর মানেই ফর্সা । যে হীনমন্যতা আপনাকে শিখিয়েছে অন্যের রুচি নির্ধারণ করে দেয়ার । যে হীনমন্যতা আপনাকে শিখিয়েছে নিজের ডার্ক কালার নিয়ে আফসোস করতে ।
হীনমন্যতা ছাড়ুন ?
অন্যের পছন্দ নির্ধারণ করার অধিকার আপনাকে দেয়া হয়নি ।